সিরাতুন্নবি (সা.)

রাসূল (সা.) এর সিরাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ইসলামে আস-সিরাত আন-নবভিয়্যাহ (নবিজির জীবনী),[১] সিরাত আল-রাসুলাল্লাহ (আল্লাহর রাসুলের সিরাত),[২] বা সিরাত বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীকে বুঝায়। এই সিরাত এর তথ্য কুরআন ছাড়াও সহীহ হাদিস, তার জীবনী এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য হতে পাওয়া যায়। ইবনে ইসহাক সীরাত রাসূল আল্লাহ লিখেন যা তার ছাত্র আল-বাক্কা’ সংরক্ষণ করেন, যেখান থেকে ইবনে হিশাম আরও সম্পাদনা করেন।[৩] প্রাথমিক যুগের সিরাত নিয়ে অন্যান্য লেখকদের বই আর পাওয়া যায়নি, যেখানে শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্ধৃতি এবং হাদিস পাওয়া গিয়েছে।[৪] আর্-রাহীকুল মাখতূমযে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারানবীয়ে রহমতসীরাতুল মুস্তফাসীরাতে খাতামুল আম্বিয়াআন নাবিয়্যুল খাতিম, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) আধুনিক সীরাত গ্রন্থের অন্যতম।

আরবি ভাষায় সীরাত বা সিরাত শব্দটি (আরবিسيرة) সারা (বর্তমান কাল: ইয়াসিরু) ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে, যার অর্থ ভ্রমণ করা বা ভ্রমণ করে আসা। একজন ব্যক্তির সীরাত হল সেই ব্যক্তির জীবন, বা জীবনী, তার জন্ম, তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, আচার-আচরণ, বৈশিষ্ট্য এবং তার মৃত্যু। আধুনিক ব্যবহারে এটি বলতে কোনও ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্তকেও বোঝায়। এটি কখনও “সীরা”, “সিরাহ” বা “সীরাত” হিসাবে লেখা হয়, যার অর্থ “জীবন” বা “যাত্রা”। ইসলামী সাহিত্যে বহুবচন রূপ, সিয়ার বলতে অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ-বিধিকে বুঝানো হয়।[]

সীরাত রাসূলাল্লাহ বা আল-সিরা আল-নবুবিযইয়া শব্দটি মুহাম্মদ (সা) এর জীবনী চর্চাকেই বুঝায়। সীরাত শব্দটি মুহাম্মদ (সা) এর জীবনী হিসেবে প্রথম ব্যবহার করেন ইবনে শিহাব আল-যুহরী, পরে ইবনে হিশামের কাজ দ্বারা এটি পরিচিতি লাভ করে। ইসলামী ইতিহাসের প্রথম দুই শতাব্দীতে, সিরা বলতে মাগাজি (আক্ষরিক অর্থে, সামরিক অভিযানের গল্প) বুঝাতো, যা এখন কেবলমাত্র সিরাহর একটি উপ-অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[] যার দ্বারা – মুহাম্মদ (সা) এর সামরিক অভিযানের কাহিনী বুঝায়।[]

সিরাত লেখার প্রাথমিক যুগে, একটি সিরাত একাধিক ঐতিহাসিক রিপোর্ট, বা আখবার নিয়ে গঠিত হত, এবং প্রতিটি প্রতিবেদনকে খবর বলা হত।[] কখনও কখনও এসবের পরিবর্তে হাদিস শব্দটি ব্যবহৃত হত।

সিরাত সাহিত্যে বিভিন্ন রকমের বিষয় রয়েছে যা মূলত মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাহাবিদের দ্বারা পরিচালিত সামরিক অভিযানের বিবরণ থাকে। এই সিরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি (যেমন হুদায়বিয়াহ চুক্তি বা মদিনার সংবিধান), সামরিক তালিকাভুক্তি, কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বিদেশি শাসকদের চিঠিপত্র ইত্যাদির মতো লিখিত নথিও রয়েছে। এটিতে বিদায় হজ্জ্বের মত মুহাম্মদ (সা) এর করা কিছু বক্তৃতা ও খুতবাও বর্ণিত রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন ঘটনা ও যুদ্ধের সময়ের অনেক কবিতার শ্লোকও রয়েছে।[]

পরবর্তী সময়কালে, নির্দিষ্ট ধরনের ঘটনা নিয়ে তাদের নিজস্ব পৃথক ঘরানা(genre) বিকশিত হয়েছিল। একটি ঘরানা হলো ;রাসুলের অলৌকিক ঘটনা’, যাকে আলাম আল-নুবুওয়া বলা হয় (আক্ষরিক অর্থে, “নবুওয়াতের প্রমাণ)। আরেকটি ঘরানা হল, ফাদা’ইল ওয়া মাসালিব – এমন ঘটনা যা তার সাহাবি, শত্রু এবং মুহাম্মদ (সা) এর সময়কালের মানুষদের নিয়ে বলে।[] কিছু কিছু সীরাতে মুহাম্মদ (সা) – এর কাহিনী ছাড়াও তার মধ্যে পূর্ববর্তী নবী, পারস্য রাজা, প্রাক-ইসলামিক আরব উপজাতি এবং খোলাফায়ে রাশিদীনেরর ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনার আলোকে সীরাত গঠিত হয়। এই অংশগুলি প্রায়শই তাফসির এবং শানে নুযূলের লেখকরা ব্যবহার করেন।[]

সিরাতুন্নবি (সা.) বিষয়ক বই সমূহের তালিকা

সিরাতুন্নবি (সা.) এর জীবনী সম্পর্কিত পরিচিত কিছু বই